আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কী ও কেন?

আজ একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা বাংলা ভাষার জন্য ধুমধাম করে এই দিনটিকে উৎযাপন করে। বাঙালিদের জন্য একুশে ফেব্রুয়ারি গৌরবের একটি দিন। আর বর্তমানে সারা বিশ্বের মানুষ এই দিনটিকে নিজ নিজ মাতৃভাষার জন্য উৎযাপন করে। নিজ মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। যখন মানুষ নিজ এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও যায়, যেখানে সবার ভাষা আলাদা, সেখানে যদি নিজ ভাষায় কাউকে কথা বলতে দেখা যায় তাহলে সে পর হলেও তাকে আপন কেউ মনে হয়। আর এটা হয় ভাষার প্রতি ভালোবাসার জন্যই। আর ঠিক এই কারণে বাংলাদেশিরা অন্য দেশের হলেও ভাষাগত কারণে তাদের প্রতি একটা টান এপার বাংলার মানুষরা অনুভব করে। ওপার বাংলার বাঙালীদেরও একই অবস্থা। ভারত এবং পাকিস্তানের পাঞ্জাবীদের মধ্যেও এই টান বা ভালোবাসা দেখা যায়। এই দিন নিয়ে বেশ ভালোই মাতামাতি হলেও অনেকেই আজকের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানে না। তাই খুব সহজ সরলভাবে সংক্ষিপ্ত করে আমি ব্যাপারটা লিখছি।

১৯৪৭ সালে ইংরেজদের তাড়িয়ে ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়। ২০০ বছরের পরাধীনতার পর দেশ স্বাধীন হলেও একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটে যায়। ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে দুটি দেশ হয়। ভারতবর্ষ এবং পাকিস্তান। পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হয় বর্তমান পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ নিয়ে। বর্তমান বাংলাদেশ তখন পূর্ব পাকিস্তান ছিল। এই দুই জায়গার মধ্যে দুরুত্ব ছিল অনেক। এছাড়া ভাষা এবং ভৌগলিক জীবনযাপন বা সংস্কৃতিও ছিল ভিন্ন। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা দেয় পাকিস্থানের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ভাষা হবে উর্দু। অর্থাৎ পশ্চিম পাকিস্তানের মতো পূর্ব পাকিস্থানেরও রাষ্ট্রীয় ভাষা উর্দু করা হবে। অথচ পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা হলো বাংলা। তাই স্বাভাবিকভাবেই বাংলার মানুষ সেটা মেনে নিতে পারেনি। এই সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ প্রতিবাদ করে। ধীরে ধীরে তা বড় আকার ধারণ করে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি আন্দোলনরত ছাত্ররা বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা করার দাবিতে ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে নামে। পাকিস্তানি পুলিশ এই বিক্ষোভে গুলি চালায়। এদিন পুলিশের গুলিতে কয়েকজন তরুণ মারা যায়। যাদের মধ্যে অন্যতম হল, রফিক, আব্দুল জব্বার, আব্দুল সালাম এবং বরকত। এই ঘটনার পর আন্দোলন আরো ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। পরের দিন আরও বেশি ছাত্রছাত্রী সহ সাধারন মানুষ রাজপথে নামে। সারা দেশজুড়ে চলে প্রতিবাদ, মিছিল। পরে বাধ্য হয়ে পাকিস্তান সরকার বাংলাভাষাকে প্রথমে অন্যতম রাষ্ট্রীয় ভাষা এবং ১৯৫৬ সালে দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

এই হলো ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। এর পরে নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে কানাডায় বসবাসরত রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালামের উদ্যোগে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস করার প্রচেষ্টা শুরু হয়। পরে আরও অনেক সংগঠন এবং মানুষের প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। বেশিরভাগ সদস্য দেশের সমর্থনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০১০ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাশ হয়। সেই প্রস্তাবে বলা হয়, এখন থেকে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারিকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করবে। তারপর থেকে সারা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ এবং প্রতিটি ভাষাভাষীর মানুষ এই দিনটিকে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

ভারত পাক ম্যাচ

ভারত-পাক ম্যাচে দুই শ্রেনির লোকদের ব্যাপারে কিছু না লিখে পারছি না। এক, কিছু মুসলিম যারা পাকিস্থানের সাপোর্টার। দুই, কিছু হিন্দু যারা মুসলিম মাত্রই মনে করে পাক সাপোর্টার। আজ কয়েকজন পাক সমর্থক মুসলিমের কাছে তাদের (কু)যুক্তি শুনলাম। কারও কারও অভিজ্ঞতা আছে ক্লাবে, হোটেলে খেলা দেখতে গিয়ে হিন্দুদের থেকে উলটো পালটা কথা শোনার। ফলে তারা নাকি পাকিস্থানের সাপোর্টার! অনেকে আবার নামাজ রোজা করেনা কিন্তু মুসলিম বলে পাকিস্থানের সাপোর্টার! আর কিছু হিন্দু তো স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতীয় মুসলিমদের পাকিস্থানে যেতে বলে, পাকিস্থানী বলে। আমার দাদুর কাছে চল্লিশ বছর আগের এক ঘটোনা শুনেছিলাম। এক শিক্ষিত হিন্দু বলেছিলেন তোমাদের জন্য তো দেশভাগ করে পাকিস্থান দেওয়া হয়েছে তাহলে কেন এদেশে আছো তোমরা! আমি অনেকের কাছেই খুব খারাপ অভিজ্ঞতার কথা শুনেছি। বিজেপি আরএসএসের লোকেরা তো বলেই অনেক অসাম্প্রদায়িক দাবি করা বাঙালী হিন্দুও মুসলিমদের সম্পর্কে কুধারণা রাখেন।

যাইহোক, যে মুসলিমরা পাকিস্থানকে সাপোর্ট করেন তাদের কিছু বলতে চাই। পাকিস্থানকে সাপোর্ট করে আপনারা ভারতীয় মুসলিমদেরই ক্ষতি করছেন। লাভ তো কিছু হচ্ছেনা উলটো আপনাদের কারনে মুসলিমদের সম্পর্কে হিন্দুদের মনে খারাপ ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে। আপনারা বলছেন হিন্দুরা আপনাদের ভারতীয় মনে করেনা, ক্লাবে হোটেলে খেলা দেখতে গিয়ে গালাগাল শুনেছেন! তাহলে একটু ভাবুন, আপনারা কি এটাই চান যে আপনার ছেলেরা বা তাদেরও ছেলেরা একইভাবে উলটো পালটা কথা শুনুক?! আপনারা যদি প্রকাশ্যে পাক সাপোর্ট বন্ধ না করেন তবে কি এদেশের মুসলিমদের আরো বেশি গালাগাল খেতে হবে না? আর কেউ কিছু বলে দিলেই কি তা মেনে নিতে হবে। এক ভাই কত সুন্দর পোষ্ট করেছেন, ‘আপনি আমাকে ঘৃণা করলেও আমি আপনাকে ভালোবাসব। কারণ এটা নিউটনের সুত্র নয়, এটা নবীজীর আদর্শ!’ আল্লাহ বলেছেন ভালো দিয়ে মন্দ দূর করতে। এটাই ইসলামের শিক্ষা। ভক্তরা তো দিনরাত আমাদের পাকিস্থান চলে যেতে বলছেন তাই বলে কি বাপ দাদার দেশ ছেড়ে চলে যাবো? নাকি নিজ অধিকারের কথা, নিজের হকের কথা বুক ফুলিয়ে বলব?!

বাস্তব কথা হল, গেরুয়া বাহিনী এবং কিছু হিন্দুদের কথা শুনে অনেক মুসলিম হীনমন্যতায় ভুগছে। ওদের কথা গুলো তাদের সত্য মনে হতে লেগেছে। আর এরা মুর্খও। এরা ভুলে গেছে ভারতীয় মুসলিমদের ইতিহাস। তারা ভুলে গেছে মুসলিমরাই এদেশে হাজার বছর শাসন করে ভারতকে সুজলা সুফলা করেছে। যদি কোন হিন্দু মুসলিমদের কিছু বলে তাহলে মাথা নিচু করে চলে আসতে হবে নাকি এর জবাব দিতে হবে? এই কাপুরুষ গুলো চুপচুপ শুনে চলে আসে আর পাকিস্থানের সাপোর্ট করে! এই হীনমন্যতা কাটীয়ে ওঠা উচিত। ব্রাদার ইমরানের মতো বুক ফুলিয়ে বলা উচিত, ❝এই দেশ আমাদের। এটা আলাদা ব্যাপার যে, এটা আপনাদেরও।❞ ওয়েসির মতো বলা উচিত, মেরা বাপকা দেশ হ্যা ইয়ে। মুসলিমরা ইংরেজদের মতো ছিলনা। ভারত শাসন করে কোটি কোটি টাকা, সোনা চান্দি নিয়ে চলে যায়নি তারা। ভারত শাসন করেছে ভারতীয় হয়েই। কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে দেশের উন্নতিতে। দেশকে গড়েছে সুন্দর স্থাপত্য শিল্প দিয়ে। আরে মুসলিমরাই তো ভারতকে সাজিয়েছে। দেশের কোথায় মুসলিম শাসনের নিদর্শন নাই? আর সবথেকে বড় কথা, যখন দেশভাগ হল তখন তো ভারতীয় মুসলিমরা চাইলে এদেশ ছেড়ে চলে যেতে পারত। তাহলে যারা চলে যায়নি, এদেশেই থেকে গেছে তাদের নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে তাদের কথা কেন চুপ করে শুনে থাকেন? মুসলিমরা কি কাপুরুষ? আপনি কি কাপুরুষ?!

পাক সমর্থকদের বলব মুসলিমদের ইতিহাস জানুন, গর্বিত হবেন। আর আজ থেকেই পাকিস্থানের সাপোর্ট করা বন্ধ করুন। বেহায়ার মতো প্রকাশ্য বলা বন্ধ করুন। পাটাকা ফাটানো বন্ধ করুন। আর কেউ আপনার দেশপ্রেমে প্রশ্ন তুললে অথবা পাকিস্থানী বললে কাপুরুষের মতো শুনে থাকবেন না। তাকে জবাব দিন, এ দেশ আমার। এদেশ আমার বাপদাদার। হিন্দুস্থান আমাদের। এটা ঠিক যে হিন্দুস্থান আপনাদেরও।

রক্তদান

ছেলেটার নাম অষ্টমি দাস। বয়স দুই বছর। ওর বাবা খুব গরীব এবং নিরক্ষর। থ্যালাসেমিয়া কি সে ব্যাপারে কোন জ্ঞান নেই। জীবনে শুনেছেও কিনা সন্দেহ! যাইহোক, সেই বাচ্চাটার A+ রক্ত লাগবে। দুই ইউনিট লাগত, এক ইউনিটের ব্যবস্থা হল। আরেক ইউনিট লাগবে। কোন ভাই দিতে ইচ্ছুক হলে আমাকে মেসেজ করুন। কাল ইসলামপুর হসপিটালে দিতে হবে সকালের দিকে।
কেন রক্তদান করবেন?
রক্তদান নিয়ে এখনও মানুষের মধ্যে অনেক ধরনের ভুল ধারণা আছে। অনেকে ভয়ে বা অনান্য ফালতু কারণে রক্তদান করতে ভয় পান। একটা স্পষ্ট কথা জেনে রাখুন, রক্তদানে কোন অপকারিতা নেই। আপনার বয়স যদি ১৮ এর বেশি এবং ৬০ এর কম হয়, আপনি যদি সুস্থ হোন, কোন সংক্রামক রোগ না থাকে এবং সম্প্রতি কোন অসুখে না ভুগে থাকেন তবে আপনি অবশ্যই রক্ত দিতে পারবেন। আর রক্তদানের উপকারিতা প্রচুর। মিলার-কিস্টোন ব্লাড সেন্টারের এক গবেষণায় দেখা যায় নিয়মিত রক্ত দিলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। বিশেষ করে ফুসফুস, লিভার, কোলন, পাকস্থলী ও গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি নিয়মিত রক্ত দাতাদের ক্ষেত্রে অন্যান্য দের চেয়ে অনেক কম থাকে। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি অনেক কমে, নিয়মিত রক্তদানে শারীরিক ফিটনেস বাড়ে, ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা কমে এবং বিভিন্ন ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধির ঝুকিও কমে, রক্ত দান করার সাথে সাথে আমাদের শরীরের ব্যোন ম্যারো নতুন কনিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। রক্ত দান করার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেহে রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায়। আর লোহিত কনিকার ঘাটতি পূরণ হয়ে যায় ৪ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যেই। আর এই প্রক্রিয়া আমাদের শরীরের সার্বিক সুস্থতা ও কর্মক্ষমতা কেই বাড়িয়ে দেয়।রক্ত দান করার মাধ্যমে একজন রক্ত দাতা তার সার্বিক সুস্থটাকে যাচাই করে নিতে পারেন । হেপাটাইটিস বি, সি, সিফিলিস, ম্যালেরিয়া এবং এইডস এই পাঁচটি রোগের স্ক্রিনিং রিপোর্ট পাওয়া যাবে বিনামুল্যে যা করতে যে কোন সাধারণ মানের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কমপক্ষে কয়েক হাজার টাকা খরচ হবে।
আর সবচেয়ে বড় কথা হল, রক্তদানের মাধ্যমে আপনি একজন নয় চারজন মানুষের জীবন রক্ষা করেন। মহান আল্লাহ বলেন, “যে ব্যাক্তি একজন মানুষের জীবন রক্ষা করল, সে যেন সমগ্র মানব জাতির জীবন রক্ষা করল” (সূরা মায়েদা/৩২)। রক্তের অপরিহার্য চারটি উপাদান হচ্ছে লোহিত কনিকা, শ্বেতকনিকা ,অণুচক্রিকা ও প্ল্যাটিলেট। একজন রক্তদাতার দেহ থেকে রক্ত সংগ্রহের পর এই চারটি উপাদান পৃথক করে চারজন রোগীকে প্রদানের মাধ্যমে চারজন রোগীর প্রান রক্ষা করা হয়। অর্থাৎ, একবার রক্ত দিয়ে আপনি চারবার সমগ্র মানুবজাতিকে রক্ষা করলেন। (ইনশা’আল্লাহ)
মানুষের উপকার করা নিয়ে বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা.) -এর বাণী শুনুন –
❖ “আল্লাহ তা’আলার নিকট সবচেয়ে প্রিয়তম মানুষ সেই ব্যক্তি, যে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী।” [সহীহুল জামি ১৭৬]
❖ ‘সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ সেই ব্যক্তি, যে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী’। (সহীহুল জামে/৩২৮৯)
তাহলে যেসকল ভাই, একজন মানুষের জীবন রক্ষা করে সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করতে চান, আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয়তম বান্দা হতে চান এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হওয়ার ইচ্ছা করেন তাদের কাছে অনুরোধ দুই বছরের এই বাচ্চাটিকে বাচানোর জন্য এগিয়ে আসুন।

বিনয় নম্রতা

মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারাই দয়াময়ের দাস, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে…’ (সুরা ফুরকান/৬৩)। বিনয়-নম্রতা হল মানুষের মহৎ গুণ। যা মানুষকে অন্যদের থেকে আলাদা করে। পৃথিবীর সকল মহামানবের মধ্যেই এই গুণ বিরাজমান ছিল। আমাদের বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা.) ছিলেন নিতান্ত বিনয়ী। তাঁর বিনয়-নম্রতার কয়েকটি দৃষ্টান্ত পেশ করলাম। আশা করা যায় এর থেকে আমরা উপকৃত হব। নিশ্চয় মুহাম্মাদ (সা.) আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।
১. একদা এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে কথা বলতে গিয়ে কাঁপতে শুরু করল। তিনি তাকে সাহস দিয়ে বললেন, ‘প্রকৃতিস্থ হও। আমি কোন বাদশা নই। আমি এমন মায়ের পুত্র, যে রোদে শুকানো গোশত খেতো’। (সিঃ সহীহাহ/১৮৭৬)
২. বাড়ির খাদেম বা চাকরের প্রতিও তিনি বিনয়ী ছিলেন। তাঁর খাদেম আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি দশ বছর রাসুল সা. –এর খিদমত করেছি। তিনি কখনও আমার জন্য ‘উহঃ’ শব্দ বলেননি। কোন কাজ করে বসলে তিনি একথা বলেননি যে, ‘তুমি এ কাজ কেন করলে?’ এবং কোন কাজ না করলে তিনি বলেননি যে, ‘তুমি কেন করলে না?’। (বুখারী/৬০৩৮; মুসলিম/৬১৫১)
৩. তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে লোক তার সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে থাকুক, সে যেন নিজের বাসস্থান দোযখে বানিয়ে নেয়’। (আবু দাউদ/৫২২৯; সিলসিলাহ সহীহাহ/৩৫৭)
৪. একদা বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সা. -এর এক সফরে একটি ছাগল রান্না করার কথা হল। এক সাহাবী বললেন, ‘ওটা যবেহ করার দায়িত্ব আমার’।
অন্য একজন বললেন, ‘ওর চামড়া ছাড়ানোর দায়িত্ব আমার’।
অন্য আরেকজন বললেন, ‘ওটা রান্না করার দায়িত্ব আমার’।
তাদের আমীর মুহাম্মাদ সা. বললেন, ‘জ্বালানী সংগ্রহ করার দায়িত্ব আমার’।
তারা বললেন, ‘আমরাই যথেষ্ট। (আপনার কষ্ট করার প্রয়োজন নেই)’।
তিনি বললেন, ‘আমি জানি, তোমরাই যথেষ্ট। কিন্তু আমি অপছন্দ করি যে, তোমাদের মাঝে পৃথক বৈশিষ্ট্য রাখি। যেহেতু আল্লাহ তার বান্দার জন্য এটা অপছন্দ করেন যে, তিনি তাকে তার সঙ্গীদের মাঝে পৃথক বৈশিষ্ট্যবান দেখেন’।
সুতরাং তিনি উঠে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে লাগলেন। [আর রাহিকুল মাখতুম/৪৭৮ পৃষ্ঠা]
৫. মহানবী সা. মাটিতে বসতেন, মাটিতে বসে খেতেন, ছাগল বাঁধতেন এবং ক্রীতদাস যবের রুটি খেতে দাওয়াত দিলেও তা গ্রহণ করতেন’। (সহীহুল জামে/৪৯১৫)

সুখে থাকতেই দোয়া করা

মানুষ যখন ভালো থাকে তখন খারাপের কথা ভুলেই যায়। সুখের সময় মনেই হয়না যে দুঃখের সময়টা কেমন! ভবিষ্যত আমাদের কাছে ঘন কুয়াশার মতোই। সামনে কি আছে বা হবে সেটার কোন ঠিক নেই। এক্ষেত্রে ধারণা করা যেতে পারে, কিন্তু ধারণা মিথ্যা না হওয়ারও কোন নিশ্চয়তা নেই। এই মহুর্তে হয়ত আপনাকে লাগছে আপনি অনেক সুখী। আপনার চাকরি বা ব্যবসা আছে, বাড়ি গাড়ি আছে, সুখী পরিবার আছে। কিন্তু যে কোন সময় এর সবকিছুই উলোট পালোট হয়ে যেতে পারে। আজ টাইম লাইনে Ashif Entaz Rabi ভাইয়ের ক্যান্সার নিয়ে একটা পোষ্ট পড়লাম, তার কয়েক লাইন শেয়ার করছি – ‘ক্যান্সার কোনো অসুখ নয়। অসুখ হলো এমন একটা বিষয়, যেটাতে যার অসুখ হয়েছে, তিনি মারা যান বা ভোগেন। ক্যান্সার হলো, অসুখের চাইতে ভয়াবহ একটি বিষয়। যেখানে পরিবারের একজনের ক্যান্সার হলেই যথেষ্ট। সেই লোকটি তো মরবেই, পুরো পরিবারসহ ডুববে। আমার এক চাচীর ঢাকা শহরে তিনটি বাড়ি ছিলো। তার ক্যান্সার ধরা পড়লো। কয়েক মাসের মধ্যে পুরো পরিবার উপলব্ধি করলেন, তাদের চেয়ে অসহায় এবং হত দরিদ্র মানুষ বাংলাদেশে আর একটিও নেই। এই ব্যাধি কেবল শরীরকে শেষ করে না, একটি পরিবারের দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক কাঠামোকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে শেষ করে দেয়। আপনি যতই ধনী হোন না কেন, এই অসুখ আপনার পুরো চৌদ্দ গুষ্টিকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেবে। খুবই অল্প সময়ে।’

এই দুনিয়াতে মানুষ আসলেই খুব অসহায়। তাই আমরা আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তার মুখাপেক্ষি। আপনার কাছে সকল কিছু থাকা সত্তেও, সকল চাওয়া পুরণ হওয়া সত্তেও, সার্থক জীবনের সন্তুষ্টি এক মহুর্তে একটা টেষ্টের রিপোর্টে সব ছাড়খাড় হয়ে যেতে পারে। ভেবেছেন ব্যাপারটা কত ভয়ানক! তারপরেও বেশিরভাগ মানুষকে দেখি দম্ভ ভরে চলতে, আল্লাহকে ভুলে দুনিয়ায় মজে থাকতে, ব্যবসা, টাকা ইত্যাদি কারণে আপন সৃষ্টিকর্তার ইবাদত না করে মুখ ফিরিয়ে থাকতে! আল্লাহ এসব মানুষদের শুভবুদ্ধি দান করুন।
আমাদের জীবন যাতে সহজ হয়, আমাদের পরীক্ষা গুলো যাতে সহজ হয় তাই উচিত বেশি বেশি দোয়া করা। কোন এক সালাফ বলেছিলেন খারাপ সময়ে ধৈর্যধারণ অপেক্ষা ভালো সময়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশই আমার কাছে বেশি পছন্দনীয়। তাই আমাদের উচিত সকল সময় বেশি বেশি দোয়া করা। খুব খারাপ সময় যাতে না আসে, বড় পরীক্ষার সন্মুখিন যাতে না হতে হয়, কঠিন রোগ ব্যাধিতে যাতে নিজে এবং পরিবারের কেউ আক্রান্ত না হয় তারজন্য আগে থেকেই প্রতিদিন দুয়া করা উচিত। আর দুয়াতে কোন কার্পন্য করা উচিত নয়।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি ওদেরকে ক্ষমা কর ও উপেক্ষা কর। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন’। (সুরা মায়িদাহ/১৩)
বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা.) -এর জীবনি পড়লেই জানা যায় সহিষ্ণুতা ও ক্ষমাশীলতার অনেক অনেক দৃষ্টান্ত তিনি রেখেগেছেন। মুর্খ, অজ্ঞানী, অসভ্যদের বর্বর ব্যবহার, ব্যঙ্গ ও নির্যাতনে তিনি চরম সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ ও শক্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করে দিয়েছেন এমন ঘটনাও কম নয় ! শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি কতই না কষ্ট বরণ করেছেন !
১. তায়েফের ঘটনা নিশ্চয় আমরা সকলেই জানি। আল্লাহর দ্বীন প্রচার করতে গিয়ে তায়েফে কী অত্যাচারই না সহ্য করতে হয়েছে দয়ার নবীকে। এই ঘটনার পর যখন পর্বত নিয়ন্ত্রনকারী ফিরিস্তা মুহাম্মাদ সা. কে বলেন, – ‘হে মুহাম্মাদ! আপনার সম্প্রদায় আপনাকে যা বলেছে যা নিশ্চয় আল্লাহ শুনেছেন। আর আমি পর্বতের ফিরিস্তা। আপনার প্রতিপালক আমাকে আপনার নিকট প্রেরণ করেছেন। আপনি ওদের ব্যাপারে আমাকে যা ইচ্ছা তাই নির্দেশ দিন। যদি আপনি চান যে, আমি মক্কার দুই পাহাড়কে একত্রিত করে ওদেরকে পিষে ধ্বংস করে দিই, তাহলে তাই হবে’। তখন নবী সা. বললেন, – ‘না, বরং আমি এই আশা করি যে, আল্লাহ ঐ জাতির পৃষ্ঠদেশ হতে এমন বংশধর সৃষ্টি করবেন, যারা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না’। [বুখারী/৩২৩১; মুসলিম/৪৭৫৪]
২. উহুদ যুদ্ধে তাঁর চেহারা রক্তাক্ত হলে তিনি রক্ত মুছতে মুছতে দু’আ করে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার সম্প্রদায়কে ক্ষমা করে দাও। কারণ, তাদের জ্ঞান নেই’। (বুখারী/৩৪৭৭; মুসলিম/৪৭৪৭)
৩. অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়ে তাঁর সাহাবাগণ তাঁকে আল্লাহর নিকট মুশরিকদের উপর বদ্দু’আ (অভিশাপ) করতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি বলেছিলেন, ‘আমি অভিশাপকারী রুপে প্রেরিত হইনি। আমি তো করুণারুপে প্রেরিত হয়েছি’। (মুসলিম/৬৭৭৮)
৪. মুশরিকদের অত্যাচারে বিশ্বনবী (সা.) সহ অনেক সাহাবাকেই নিজের মাতৃভুমি ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। মক্কাতে মুসলিমদের উপর চলেছিল সীমাহীন অত্যাচার। কিন্তু যখন মক্কা বিজয় হল তখন মুশরিকদের মতো মুসলিমরা করেনি। তারা প্রতিশোধ নেয়নি। বিশ্বনবী চাইলে কঠোর প্রতিষোধ নিতে পারতেন। তিনি মক্কার মুশরিকদের ধ্বংস করে দিতে পারতেন। সেদিন মুহাম্মাদ (সা.) ঘোষনা করে বলেছিলেন, ‘যে আবু সুফিয়ানের ঘরে ঢুকবে, সে নিরাপদ। যে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে নেবে, সে নিরাপদ। যে মসজিদে ঢুকবে, সে নিরাপদ। যে অস্ত্র বর্জন করবে, সে নিরাপদ’। (মুসলিম/৪৭২৪; আবু দাউদ/৩০২৩)
ক্ষমাশীলতা ও সহিষ্ণুতার এরকম অনেক ঘটনা আছে মুহাম্মাদ (সা.) –এর সারা জীবন জুড়েই। ক্ষমাশীলতা আল্লাহ ভালোবাসেন। তাই মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন –
☛ ‘তুমি ভালো দ্বারা মন্দের মোকাবিলা কর’। (মু’মিনুন/৯৬)।
☛ ‘মন্দের প্রতিফল অনুরুপ মন্দ’। (শুরা/৪০)
☛’ভালো এবং মন্দ সমান হতে পারেনা। মন্দ প্রতিহত করো উৎকৃষ্ট দ্বারা, এর ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো হয়ে যাবে’। [সুরা ফুসসিলাত/৩৪-৩৫]

ইসলাম নিয়ে চর্চিত কয়েকটি রটনা এবং তার সত্যতা যাচাই

ssdadad

এবেলার ওয়েবসাইটে একটা লেখা দেখলাম ‘ইসলাম সম্পর্কে কয়েকটি রটনা যার কোনওটিই সত্য নয়’ শিরোনামে। এই লেখাতে পাঁচটি টপিক নিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হয়েছে। বিষয়গুলো হল, মুসলিম মাত্রই জঙ্গী মনোভাবাপন্ন, বলপ্রয়োগ করে ইসলামের বিস্তার হয়েছে, ইসলামে নারী অধিকার স্বীকৃত নেই, জিহাদ, এবং ইসলাম অন্য ধর্মের প্রতি অসহিষ্ণু। লেখাটিতে সংক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি বাক্যে উপরোক্ত বিষয় গুলোতে আলোচনা করা হয়েছে। লেখাটি পড়ে আমার মনে হল এটাকে আমি আমার মতো করি লিখি। সংক্ষিপ্ত কিন্তু তথ্যবহুল হলে খুব ভালোই হবে। আমার এই লেখা লেখার উদ্দেশ্য এটাই। ইসলাম বিদ্বেষীদের অভাব মুহাম্মাদ (সা.) –এর সময়েও ছিলনা এখনও নেই। কিয়ামাত পর্যন্ত অভাব হবেও না। ইসলাম বিদ্বেষীরা বিভিন্নভাবে ইসলামের সমালোচনা করে, ভুল ব্যাখা করে, মিথ্যা রটনা করে সমাজে ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। আগে যে এমন হতো না তা নয়, কিন্তু আগের মুসলিমদের চরিত্র এমন ছিল যে বিদ্বেষীদের মিথ্যা প্রচারে তেমন কোন প্রভাবই পড়ত না। এখনকার মুসলিমদের চরিত্রে ইসলাম প্রকাশ পায়না বলেই এই সমস্যা গুলো বেশি প্রকট হচ্ছে বলে আমার বিশ্বাস। তার সাথে কিছু স্বার্থপর নামধারী মুসলিম এবং চরমপন্থী খারেজীদের কারনে ইসলাম সন্ত্রাসের ধর্ম বা মুসলিমরা জঙ্গী মনোভাবাপন্ন বলেও একটা ধারণা সৃষ্টি করতে অনেকটা সক্ষম হয়েছে ইসলামের দুশমনরা। এছাড়া আরো কয়েকটি ব্যাপারে ব্যাপক অপপ্রচার হয়েছে যার সত্যতা যাচাই করা জরুরি। আসুন এই ব্যাপারে আলোচনা করা হোক।

 মুসলিম মাত্রই জঙ্গী মনোভাবাপন্নঃ 

এটা নিছকই একটা অপবাদ। এবং হাস্যকর অপবাদ। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসী আক্রমন এবং কয়েকটি মুসলিম দেশের অশান্ত অবস্থা দেখে অনেকেই এই অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হোন এবং সত্য ভেবে বসেন। ঠান্ডা মাথায় একটু ভেবে দেখুন এসব অশান্তি কত দিনের? যদি মুসলিম মাত্রই জঙ্গী মনোভাবাপন্ন হতো তবে এই পৃথিবীই থাকত না। এই পৃথিবীতে মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় দুশো কোটির কাছাকাছি। এটা কত বড় জনসংখ্যা একটু ভাবুন। পৃথিবীর প্রত্যেক তিন জন ব্যক্তির একজন মুসলিম। যদি আসলেই মুসলিমরা জঙ্গী মনোভাবাপন্ন হয় তাহলে পৃথিবীর কোন কোনাতেই শান্তি থাকা সম্ভব নয়। কোন কোন মিডিয়া এমনভাবে কিছু ঘটনাকে তুলে ধরে যেন মুসলিম মাত্রই এমন। কয়েকটি মুসলিম দেশ অশান্ত তার মানে এই নয় সারা মুসলিম দুনিয়া অশান্ত। ষাটটিরও বেশি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশ আছে। কিন্তু মিডিয়ায় তো মাত্র কয়েকটা দেশের কথাই ঘুরে ফিরে আসে বারবার। আর একটু ভালোভাবে চিন্তাভাবনা করলেই বুঝতে পারবেন সেই দেশগুলোর সাথে তেলের সম্পর্ক আছে এবং আমেরিকার নামও জড়িত আছে। সবকিছু আসলে রাজনৈতিক। মুসলিমরা কোন ভাবেই জঙ্গী মনোভাবাপন্ন বা সন্ত্রাসে উতসাহ দেয়না। কারণ, ইসলাম মুসলিমদের তা শেখায় না। মহান আল্লাহ বলেন, “ধর্মে বল প্রয়োগের কোনো স্থান নেই । সঠিক পথ প্রকৃতই ভুল পথ হতে পৃথক…”। (সুরা বাক্কারাহ/২৫৬)। ইসলাম সন্ত্রাসী হওয়ার নয় বরং ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেয়। মহানবী (সা.) বলেন,  ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করবে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করবেন না’ (বুখারী/৭৩৭৬; মুসলিম/৬১৭২)। তিনি আরো বলতেন, ‘দয়ার্দ্র মানুষদেরকে পরম দয়াময় (আল্লাহ) দয়া করেন । তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া প্রদর্শন করো, তাহলে তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন, যিনি আকাশে আছেন’ (তিরমিযী; সহীহ আবু দাউদ/৪১৩২)। ‘সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ সেই ব্যক্তিযে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশী উপকারী‘। [সহীহুল জা’মে/৩২৮৯; দারাকুত্বনী, সিলসিলাহ সহীহাহ/৪২৬]

বলপ্রয়োগ করে ইসলামের বিস্তার হয়েছেঃ  

হামেশাই ইসলাম সম্পর্কে একটা অপবাদ দেওয়া হয় যে ইসলাম প্রসার লাভ করেছে তরবারীর জোরে। মানে বলপ্রয়োগ করে। মুসলমানরা কোন রাজ্য জয় করলে রাজ্যবাসীদের নাকি মুসলিম হতে বাধ্য করতেন নতুবা কতল করতেন। এই কথা যে ১০০% মিথ্যা তার হাজারো প্রমান আছে। একজন সাধারণ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষও নিজের বুদ্ধির অল্প ব্যবহার করেও বুঝে যাবে এটা কতটা অযৌক্তিক আর মিথ্যায় ভরা অপবাদ। যেমন ধরুন, স্পেন বা ভারত উপমহাদেশে মুসলিমরা ১০০০ বছরের মতো শাসন করেছে। কিন্তু এসব দেশে কি মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ট? নাহ, এখানে মুসলিমদের থেকে কয়েক গুন বেশি অমুসলিম আছে। যদি এদের জবরদস্তি মুসলিম করা হতো তবে কি এখানে অমুসলিম থাকার কথা ছিল? নাহ, ১০০০ বছর ধরে অমুসলিমদের জবরদস্তি মুসলিম করা হলে একজন অমুসলিমও থাকার কথা নয়। আরো দেখুন, আরব দেশ গুলোতে চৌদ্দ’শ বছর ধরেই মুসলিমরা শাসন করছে তারপরেও সেইসব দেশে যথেষ্ট পরিমাণে অমুসলিম আছে। এইসব দেশ জলন্ত উদাহরণ এটার যে মুসলিম শাসকরা জবরদস্তি অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহন করতে বাধ্য করেননি। মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার কথা ধরুন এখানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ট। ইন্দোনেশিয়া বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। কবে, কোন সৈন্য এ দেশ দুটিতে তরবারীর জোরে ইসলামের বিস্তৃতি ঘটিয়েছে? এখানে তো মুসলিম সম্রাটরা কখনোই শাসন করেনি। এরা মুসলিম হয়েছে ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে, তরবারী জোরে নয়। ইসলাম বা মুসলিমরা কি সত্যিই অমুসলিমদের জবরদস্তি মুসলিম করেছে? অনান্য ধর্মে হস্তক্ষেপ করেছে? ধর্মপালনে বাধা দিয়েছে? এসব ব্যাপারে ঐতিহাসীকদের মতকেই অধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ, তাঁদের কাজই ইতিহাস নিয়ে গবেষনা করা আর সত্যান্বেষন করা। আসুন কয়েকজন ঐতিহাসিক এবং সত্যান্বেষীর মতামত জানা যাক –

◆ ইসলাম কোন ধর্মের নীতিতে হস্তক্ষেপ করেনি। কোন ধর্মের অবজ্ঞা করেনি। কোন ধর্মীয় বিচারালয় বিধর্মীদের শাস্তি প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠা করেনি। ইসলাম কখনো লোকদের ধর্মকে বলপূর্বক পরিবর্তনের সংকল্প করেনি। [M.D Saint Hiller]

◆ স্যার পি.সি রায় বলেছেন – একথা সরাসরি মিথ্যা যে, ইসলাম তরবারির জোরে প্রচারিত হয়েছে। ইসলাম যদি তরবারির দ্বারাই প্রচার লাভ করবে তবে মুসলমানের রাজত্ব হওয়া সত্ত্বেও এত হিন্দু কি করে বসতি লাভ করল? যদি ও কথা সত্য হয়, তবে হিন্দুদের ঐ অঞ্চল থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। [করাচি অভিভাষন, ২৯ আগষ্ট ১৯৩২

ইসলামে নারী অধিকার স্বীকৃত নেইঃ

ইসলামে মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত। কন্যা হত্যা মহাপাপ। কন্যারাও সম্পত্তিতে ভাগ পাবে। বলা হয়েছে পুরুষদের মতো নারীদেরও অধিকার আছে। ইসলামে স্ত্রীর দিকে প্রেমের দৃষ্টিতে তাকানো পূণ্যের কাজ। স্ত্রীর মুখে খাবার তুলে দেওয়া পূণ্যের কাজ। পূত্র এবং কন্যা সন্তানের সাথে সমান ব্যাবহার করতে বলা হয়েছে ইসলামে এমনকি চুমু দেওয়ার ক্ষেত্রেও। বলা হয়েছে, সেই পুরুষ সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। নারীদেরও বিবাহ বিচ্ছেদ করার অধিকার দিয়েছে। বিয়েতে স্ত্রীদের মোহর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিয়েতে মেয়েদের মত নেওয়া জরুরি বলা হয়েছে। স্বামীদের জন্য স্ত্রীদের সংসারী কাজে সাহায্য করা পূণ্যের কাজ। নারীদের ভরনপোষণ এবং রক্ষা করার দায়িত্ব পুরুষদের দেওয়া হয়েছে। ইসলাম ঘোষণা দিয়েছে কন্যা সন্তানদের উত্তমভাবে লালনপালন করার পুরুষ্কার জান্নাত। কন্যা সন্তানের জন্মকে বরকতময় বলা হয়েছে। গর্ভাবস্থায় নারী মারা গেলে ইসলাম তাকে শহীদের মর্যাদা দিয়েছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের সঠিক অধিকার দিয়েছে ইসলাম। কোনভাবেই তাদের নিচু করে দেখা হয়নি বা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্ছিত করা হয়নি। ইসলাম ছাড়া অন্য কোন মতবাদে স্পষ্টভাবে নারী অধিকার স্বীকৃত হয়নি। দুনিয়াতে গণতন্ত্র আসার পর নারী অধিকার ধীরে ধীরে স্বীকৃত হচ্ছে। তার আগে মুসলিম দুনিয়া ব্যতিত নারী অধিকার স্বীকৃত ছিলনা। নারী স্বাধীনতার বিখ্যাত বক্তা মিল (MILL) তার ‘পরাধীন নারী’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘ইউরোপের ইতিহাসের দিকে তাকান, খুব বেশী দিন অতিবাহিত হয়নি যখন বাপ তার মেয়েকে যেখানে ইচ্ছা বিক্রি করে দিতো। এ ব্যাপারে তার ইচ্ছার কোন তোয়াক্কাই করা হতো না’। রুশ প্রবাদ আছে ‘মুরগী যেমন পাখি নয়, নারী তেমনি মানুষ নয়’। 1917 সালের আগের ইংল্যান্ডে পুরুষদের অধিকার ছিল লাঠি বা চাবুক দিয়ে স্ত্রীদের মারধর করার। রাশিয়ার জার শাসনের অন্তিম লগ্ন পর্যন্ত স্ত্রী প্রহার এত সাধারণ প্রথা ছিল যেন বিয়ের আগে নববধুর বাবা জামাইকে উপহার দিত একটি নতুন চাবুক। কিছু সভ্যতায় এমন ছিল যে বাড়ির যে পুরুষই অপরাধ করুক না কেন, স্ত্রীকে শাস্তি দিলেই হবে। স্ত্রীকে খুন করার অধিকার স্বামীর ছিল। অথচ এই ধরনের কোন অসভ্যতায় ছিলনা মুসলিম দুনিয়ায়। কারণ নারীদের ব্যাপারে পুরুষদের কঠোরভাবে সাবধান করা হয়েছে ইসলামে।

জিহাদঃ  

জিহাদ মানেই রক্তারক্তি বা খুনোখুনি নয়। জিহাদ মানেই বিধর্মীদের হত্যা করা নয়, জিহাদ মানে যেখানে সেখানে বোমব্লাস্ট করে নিরীহ মানুষদের হত্যা করা নয়। জিহাদ আসলে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই। জিহাদের অর্থ সংগ্রাম বা প্রচেষ্টা করা। নবী (সা) এবং সাহাবাদের যুগে জিহাদ করে বিশৃঙখল এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শান্তিপূর্ণ এলাকা বিশৃঙখল হয়নি। ইসলামী চিন্তাবিদ্গণ বলেন, জিহাদ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠাকল্পে ফরয করা হয়েছে ইসলামে। জিহাদ জিহাদের ময়দানেই সীমাবদ্ধ থাকবে। বেসামরিক লোকেদের হত্যা করা যাবেনা জিহাদে। কোন দূত হত্যা করা যাবেনা তাতে। বৃদ্ধ, নারী ও শিশু হত্যা করা যাবেনা। শত্রু পক্ষের ফসল নষ্ট করা যাবেনা। অপ্রয়োজনে বাড়ি ঘর জ্বালানো যাবেনা এবং উপাসনালয় নষ্ট করা যাবেনা। সুতরাং যে লড়াইতে ইসলামী উদারনীতির লংঘন হয় তা জিহাদ নয়। ([যুব সমস্যা ও শরয়ী সমাধান/১৯৬ পৃষ্ঠা] মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন হত্যার বিনিময় ব্যতীত কাউকে হত্যা করল অথবা সন্ত্রাস সৃষ্টি করল সে যেন সমগ্র মানব জাতিকেই হত্যা করল। আর যে একটা প্রাণকে বাঁচাল সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে বাঁচাল’ (সূরা মায়েদা)। নবীজী বলেন, ‘যে কোন অমুসলিমকে (অকারণে) হত্যা করবে সে জন্নাতের সুঘ্রাণও পাবেনা। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ ৪০ বছরের দুরুত্ব থেকেও পাওয়া যাবে’ মহানবী সা• তাঁর দশ বছরের সামরিক জীবনে প্রায় ৩০ লাখ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ইসলামী সালতানাতের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। অথচ এই বিশাল এলাকা জয় করতে সকল যুদ্ধে মুসলমানরা সর্বমোট ২৫১ জন কাফির সৈন্য হত্যা করেছেন। আর মুসলমানদের মধ্যে শাহাদাত বরণ করেছেন সর্বোচ্চ ১২০ জন। পৃথিবীর শুরু থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া অনৈসলামিক যুদ্ধ-বিগ্রহের ইতিহাস তন্ন তন্ন করে খুজলেও এত বিশাল এলাকা বিজয়ের জন্য এত কম সংখ্যক প্রাণহাণীর অন্য কোন নযীর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

ইসলাম অন্য ধর্মের প্রতি অসহিষ্ণুঃ

এটা সবথেকে বড় মিথ্যা কথা গুলোর একটা। কারণ, আরবে  ইসলাম প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এখনও অনেক খৃষ্টান ইহুদি আছে। তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। আর মদিনা সনদ অন্য ধর্মের প্রতি সহিষ্ণু হওয়ার সবথেকে বড় প্রমাণ। মদিনা সনদের কয়েকটি ধারা দেখুন, সনদপত্রে স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়সমূহ একটি জাতি গঠন করবে; মুসলিম, খ্রিষ্টান, ইহুদি, পৌত্তলিক ও অন্যান্য সম্প্রদায় ধর্মীয় ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে, কেউ কারো ধর্মীয় কাজে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করতে পারবে না; কোনো লোক ব্যক্তিগত অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবেই বিচার করা হবে, তজ্জন্য অপরাধীর সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না; মুসলমান, ইহুদি ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা পরস্পর বন্ধুসুলভ আচরণ করবে। মহানবী মুহাম্মাদ (সা.) এর মদিনা রাষ্ট্রের এসব সংবিধান কি অসহিষনু? মক্কাতে মুসলিমদের প্রতি কত ভয়ানক অত্যাচার হয়েছিল, তাদের ঘর বাড়ি সম্পদ লুন্ঠিত হয়েছিল, অত্যাচারের জ্বালায় মুসলিমদের মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করতে হয়েছিল। পরে যখন মুসলিমরা মক্কা বিজয় করে তখন কোন রকম রক্তপাত হয়নি। ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছিল অত্যাচারীদের। ইসলাম বা মুসলিমরা যদি অন্যদের প্রতি অসহিষনু হতো তাহলে কি আরবে একজনও ইহুদি খৃষ্টানের বেচে থাকার কথা ছিল। শুধু তাই নয়, যদি সারা বিশ্বের যেসব জায়গায় মুসলিমরা বছরের পর বছর শাসন করেছে তার দিকে তাকানো হয় তবুও এটাই প্রমানিত হবে যে তারা সহিষনু। অন্য ধর্ম, সংস্কৃতি এবং অমুসলিমদের অস্তিত্বই প্রমান করে ইসলাম সহিষনু নয়। যে সকল অমুসলিমরা আল্লাহ ছেড়ে অন্যদের উপাসনা করে তাদের নিয়ে মুসলিমরা যাতে কোনো রকম ব্যাঙ্গ বা কটুক্তি না করেন সে ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে তারা ডাকে তাদের তোমরা গালি দিও না…’।(কুরান;৬/১০৮)। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা সকল ধর্মের মানুষদেরকে দান কর’। (ইবনে আবী শাইবা; সিঃ সহীহাহ/২৭৬৬)। ইসলাম অন্য ধর্মের প্রতি অসহিষনু নয় তার সব থেকে বড় প্রমান এই আয়াতটায়। ইসলাম অন্য ধর্মের প্রতি অসহিষ্ণু হলে এত অল্প সময়ে এত প্রভাব বিস্তারকারী ধর্মে পরিণত হতে পারত না।

 “হে মুমিনগণ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকবে; কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন কখনো সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে, সুবিচার করবে এটি তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় করবে, তোমরা যা কর আল্লাহ তা পুরো খবর রাখেন” (সুরা মায়েদা/৮) ।

 

 

একটু ভাবুন, যে ইসলাম বলে সকল ধর্মের মানুষদের দান করার কথা, বাবা মায়ের সাথে সর্বোত্তম ভালো ব্যবহার করার কথা, যাকাত-ফিতরা-অশর দেওয়ার কথা, গরীব অনাথ বিধবাদের দেখভাল করার কথা, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করার কথা, স্ত্রীর সাথে সুন্দর ব্যবহার করার কথা, মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করার কথা, মানুষকে দেখে হাসি মুখে কথা বলার কথা, খাদ্য দানে উৎসাহ দেওয়ার কথা, অশ্লীলতা ও নোংরামি থেকে দূরে থাকার কথা, অকারণে কাউকে কটু কথা বা কষ্ট না দেওয়ার কথা, খামাখা একটা কুল গাছও না কাটার কথা, অকারনে জল নষ্ট না করার কথা এমনকি জলধারার কাছে থাকলেও, কিয়ামত কায়েম হলেও সম্ভব হলে চারাগাছ লাগানোর কথা, বিনা কারণে একটা পিঁপরাও না মারার কথা এবং এই ধরণের হাজরো লাখো ভালো কথা। যা সৎ চরিত্রের মানুষ, ভালো পরিবার, সুষ্ঠ সমাজ, সুন্দর দেশ এবং শান্ত পৃথিবীর জন্য একান্ত দরকারি ও উপকারী।

সেই ইসলাম কিভাবে সন্ত্রাস ও মানুষ হত্যার কথা বলতে পারে?!

এটা কি আপনাদের বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে? ইসলাম যদি সন্ত্রাসের ধর্ম হত তবে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক পাথর, কাটা, কাচ ইত্যাদি সরানো পুণ্যের কাজ হিসেবে কেন করতে বলা হতো? একটা হিংস্র বর্বর ধর্ম, সন্ত্রাসের ধর্ম কিভাবে ঘোষণা করতে পারে তোমরা সকল ধর্মের মানুষদের দান করো? খামাখা সামান্য পিঁপড়া মারাও যে ধর্মে নিষেধ সেই ধর্ম কিভাবে মানুষ মারার অনুমতি থাকতে পারে?

ইসলাম একটা তৃষ্ণার্ত কুকুরকে জল খাওনোর কারনে একজনের জান্নাত যাওয়ার শিক্ষা দেয়। এবং একটা বেড়ালকে বেঁধে রেখে খাবার না দেওয়ার কারনে বেড়ালটা মারা গেলো তার জাহান্নামে যাওয়ার কথা বলে। সেই ইসলামে মানুষ মারার শাস্তি কী হতে পারে ভাবুন। প্লিজ ভাবুন!

বিয়েকে সবাই এনজয় করতে নাও পারে। সবার কাছে বিয়েটা আনন্দদায়ক বা মধুর নাও হতে পারে। বিয়ের পরেও অনেকের জীবনে রোম্যান্টিকতা নাও থাকতে পারে। কিন্তু যারা আল্লাহতে বিশ্বাসী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বিয়ে করে এবং স্ত্রীর সাথে সুসম্পর্ক রাখে তাদের জীবনটা সত্যিই খুব সুন্দর হয়। ইসলাম আমাদের শেখায় বিয়ে হল অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ করা। বিয়ে তো আল্লাহর এক বিশেষ নি’আমাত। আর স্বামী স্ত্রী হল একে অপরের পোষাকের মতো। স্বামী স্ত্রীর প্রেমের সাথে কোন কিছুরই তুলনা হয়না। এ এক আশ্চর্যকর সৃষ্টি। আল্লাহ মুমিনদের বিবাহিত জীবন অনেক সুন্দর করেছেন। এটা আল্লাহর তরফ থেকে বিশ্বাসীদের জন্য বিশেষ অনুগ্রহ।

ছোট শিশুদের একটা বিকৃত মজার খেলা হল কুকুরের বাচ্চা, বেড়ালের বাচ্চা, ব্যাঙ ইত্যাদিকে মারা। অকারনে তাদের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারা, লাঠি দিয়ে পেটানো ইট্যাদি করে থাকে অনেক শিশু। এই ব্যাপারে বাবা মায়েদের গুরুত্বের সাথে একটু নজর দেওয়া উচিত এবং পশু পাখিদের প্রতি দয়া প্রদর্শনের শিক্ষা দেওয়া উচিত। এসব বিকৃত কাজের মাধ্যমে বাচ্চারা ছোট থেকেই হিংস্র এবং কঠোর হৃদয়ের হয়ে যায়। যা বড় হয়ে ভয়ানক রূপ নিয়ে নিতে পারে। তাই অবশ্যই এই ব্যাপারে সাবধান হতে হবে। সকল পশু পাখি আল্লাহর সৃষ্টি, তাদের প্রতি দয়া করায় নেকি আছে এবং তাদের কষ্ট দেওয়ায় গুনাহ আছে এই শিক্ষা দিতেই হবে। যাতে বাচ্চা থেকেই শিশুরা এরকম বিকৃত মজা করা থেকে দূরে থাকে এবং অন্যদের বাধা দেয়।

আর্থিক স্বচ্ছলতার খুব দরকার। এই ব্যাপারে দুশ্চিন্তাহীন হলে অনেক ব্যাপারেই উদ্যমের সাথে কাজ করা যায়। আর বেকারত্ব বা অভাব অনটন হলে বেশিরভাগ সময় কাটে রুজি রোজগারের দুশ্চিন্তাতেই। জীবনে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়াটা সবদিক দিয়েই খুব জরুরি। দ্বীনি শিক্ষার প্রতিবন্ধকতা বইতে পড়েছিলাম কোন এক আলেমের কাছে একজন দ্বীন শিক্ষা করতে আসলে তাকে আগে তার রুজির ব্যবস্থার কথা জিজ্ঞেস করতেন। বেকার হলে আগে রিযিক তালাশ করতে বলতেন। কারণ, রুজীর দুশ্চিন্তা নিয়ে দ্বীন শিক্ষা কঠিন! উমার (রা.) বলতেন, ‘কোন কোন মানুষকে দেখে আমি বড় পছন্দ করি। অতঃপর খোঁজ নেওয়ার পর যখন জানতে পারি যে, ওর কোন কাজ ধান্দা নেই, তখন সে আমার চোখে ছোট হয়ে যায়’।

বৃদ্ধ বয়সে বাবা মাকে না দেখা, তাদের জন্য খরচ না করা এবং তাদের প্রাপ্য সম্মান না দেওয়ার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আজকেও একটা ঘটনা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। নৈতিকতা ও মূল্যবোধহীন শিক্ষা এবং ধর্ম বিমুখতা এক কঠিন সমাজ তৈরি করে চলেছে। যার থেকে সমাজ ও পরিবারকে বাঁচাতে সরকার এবং প্রত্যেক দায়িত্বশীল মানুষদের প্রচুর কাজ করতে হবে। বেশিরভাগ বাবা মায়েদের দেখে অবাক হয় যারা তাদের বাচ্চাদের বড় মানুষ করতে কতই না চেষ্টা প্রচেষ্টা করে কিন্তু সন্তানকে ভালো মানুষ বানানোর কোন চেষ্টাই করেনা। অথচ নিজেদের জন্যই উচিত সন্তানকে বড় মানুষ বানানোর পাশাপাশি ভালো মানুষ বানানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাওয়া।

শেষে মহান পয়গম্বর!

শেষে মহান পয়গম্বর!

Think & grow Rich নেপোলিয়ান হিলের বিশ্ববিখ্যাত বই। বইটি প্রায় ১৫,০০,০০০ কপি বিক্রি হয়েছে সারা বিশ্বে। এটি ধনী হওয়ার বিষয়ের উপর লেখা সর্বশ্রেষ্ঠ বই। বইটি সম্পর্কে আমেরিকার রাস্ট্রপতি উইড্রো উইলসন বলেছিলেন, ‘আপনার পরিশ্রমের জন্য আমি আপনাকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করতে চাই। যে ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে গবেষনা করার পর একটা সারমর্ম বার করতে পারে সে যে সকলের কাছে অমুল্য তাতে কোন সন্দেহ নেই। আপনার ‘মাস্টার মাইন্ড’ সিদ্ধান্তের বিশ্লেষণ আমাকে খুবই প্রভাবিত করেছে’। বইটি হিলের সারা জীবনের গবেষনার ফল। এই বই লিখতে তিনি পঁচিশ হাজার লোকের উপর গবেষনা করেন এবং ৫০০ এমন ধনীর ব্যক্তির উপর গবেষনা করেন যারা ছিল দরিদ্র, অল্প শিক্ষিত এবং তাদের কোন প্রভাবশালী বন্ধু বা আত্মীয়ও ছিলনা এবং অর্থও ছিলনা, তার পরেও তারা প্রচুর ধনী হতে পেরেছিল। যাইহোক, বইটি পড়তে পড়তে একজায়গা চমকে উঠলাম। একটা অধ্যায়ের নাম ‘শেষে মহান পয়গম্বর’। নেপোলিয়ান হিল পাঠকদের বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন মুহাম্মাদ (সা.) -এর জীবনি পড়তে। যাতে করে অধ্যাবসায় এবং একাগ্রতার শক্তি সম্পর্কে জানতে পারে। এবং দুই পেজে মুহাম্মাদ (সা.) -এর সংক্ষিপ্ত জীবনিও দিয়েছেন।

সম্পত্তির মোহ কিছু মানুষকে এমনভাবে মোহগ্রস্ত করেছে যে, সন্তানের মৃত্যুর দুঃখও একসময় ভুলে যাচ্ছে কিন্তু সম্পত্তির লোকসানের আফসোস ভুলতে পারছেনা।

যারা বিয়ে করে হতাশ হয় তারা আসলে লোভে পরে বিয়ে করে। সৌন্দর্য, টাকা, সেক্স, রোমান্স, আনন্দ ফুর্তি, নিরাপত্তা, সুযোগ সুবিধা ইত্যাদি। কিন্তু সুখী দাম্পত্যের জন্য শুধু এসবই যথেষ্ট নয়। এসব শুধু একেকটা উপকরণ হতে পারে সুখী বিবাহিত জীবনের। কিন্তু এসবই সব নয়। উপন্যাস, রূপকথা আর মুভির সাথে বাস্তবের অনেক তফাৎ। একটা সুখী দাম্পত্য গড়ে তোলা সবচেয়ে কঠিন কাজ গুলোর একটা। যারা বিয়ে মানেই মৌজা হি মৌজা মনে করে তাদের বিয়েতে হতাশা আসায় স্বাভাবিক। কারন বিয়েতে মজার সাথে কষ্ট, চাপ আর ঝামেলাও আছে। আসলে নিজের দ্বীনকে পূর্ণ করার জন্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিবাহ না করলে সুখী হওয়া খুব কঠিন। বিয়ে একটা ইবাদাত। প্রতি পদে নেকি। এমনকি স্ত্রীর দিকে ভালোবাসার নজরে তাকানো বা খাবারের লোকমা মুখে তুলে দেওয়াও। এমনকি সহবাস করলেও। আপনার সাথির মধ্যে অনেক ভালো গুন থাকলেও খারাপও অনেক কিছু থাকবে, এটা আপনি মেনে নেবেন কিভাবে? যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিয়ে করেন তবে তো ধৈর্য ধরবেন, যা আপনার জন্য নেকীর। আল্লাহ বলেছেন, কিছু খারাপ লাগলেও কিছু ভালো লাগবে। তাই খারাপ ব্যাপার কষ্ট পেলেও মেনে নিয়ে, ধৈর্য ধরে আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন কর্বনে। এভাবেই দাম্পত্য জীবনের সকল ভালো খারাপ ব্যাপারকে আপনি ইনজয় করবেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই। আপনি নিজে থেকেই স্ত্রীকে সময় দেবেন, হাসি ঠাট্টা করবেন, খেলা তামাশা করবেন, তার ঝুটা খাবেন ইত্যাদি। যার প্রতিটিই সুন্নাহ, নেকীর কাজ। এসবে আনন্দও পাবেন আবার নেকিও। তাই জান্নাতের জন্য একজন মুসলিম সবসময় স্ত্রীর সাথে সর্বোত্তম ব্যবহার করবে। কারন হাদিসে আছে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে স্ত্রীর কাছে উত্তম। আল্লাহর জন্য না হলে কোনভাবেই আজকের যুগে বিয়ে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা সম্ভব নয় এবং বিয়েকে ইনজয় করা সম্ভব নয়। তাই যারা বিয়ে করতে যাচ্ছেন বা বিয়ে করবেন তাদের উদ্দেশ্যে বলব বই এর মুভির রোম্যান্টিকতা দেখে বিয়ে করবেন না বা লোকের মুখে বিয়ের ব্যাপারে হতাশাজনক কথা শুনে ঘাবড়াবেন না। বিয়ে আল্লাহর এক বিশেষ নেয়ামত। এটার সুখের কোন তুলনায় হয়না। যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং দ্বীনকে পূর্ণ করার জন্য বিয়ে করেন, কারও হাত ধরে জান্নাত যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এবং সেটার জন্য কাজ করার জন্য বিয়ে করেন তবে অবশ্যই আপনার বিয়ে সফল হবে। অবশ্যই আপনি সুখী বিবাহিত জীবন কাটাতে পারবেন।

অন্যায়ের প্রতিবাদ, অন্যায় দিয়ে করাটাও অন্যায়! সবার সাথেই সুবিচার করা উচিত। একজন চোরকে যদি কেউ ফাসি দিতে চাই বা পিটিয়ে মারতে চাই তবে চো্রের হয়ে প্রতিবাদ করাটা অন্যায় নয়। বরং অন্যায়ের প্রতিবাদ। কারন, সে যে অপরাধ করেছে তার থেকে বেশি শাস্তি না পাওয়ার অর্থাৎ সুবিচারের অধিকার সেও রাখে।

ধর্ষন বিরোধী সভা

ধর্ষন বিরোধী সভায় একজন মহিলা বলছে – ‘আমাদের শিক্ষা দিতে হবেনা আমরা কি পড়ব না পড়ব, আপনার ছেলেকে শিক্ষে দিন যাতে মেয়েদের ধর্ষন না করে!!

চুরি/ডাকাতী বিরোধী সভায় একজন মহিলা বলছে – ‘আমাদের শিক্ষা দিতে হবেনা আমরা সোনা, হিরা, লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে বাসে ট্রেনে সফর করব কি না, আপনার ছেলেকে শিক্ষা দিন যাতে চুরি-ডাকাতি না করে’।

কিন্তু কথা হল চোরে তো ধর্মের কাহিনী শুনবে না। যদি উপদেশ দিয়েই মানুষকে ঠিক করা যেত তাহলে পৃথিবীতে কি এত অপরাধী, এত চুরি-ডাকাতি, ধর্ষন, দুর্নীতি হতো?!!

তাই আমাদের উচিত নিজে থেকেও কিছু ব্যবস্থা নেওয়া। যেমন বাসে ট্রেনে লক্ষ্ লক্ষ টাকা নিয়ে বা ৫-১০ ভরি সোনা পড়ে সফর না করা, বা চুরি ডাকাতি খুব হয় সেই রকম রাস্তা দিয়ে না যাওয়া ইত্যাদি…ইত্যাদি। আমরা এমন সাধারণত করেও থাকি। যেমন আমাদের এলাকায় একটা রাস্তায় খুব বাইক/সাইকেল ছিনতায় হয় তাই অনেকেই সন্ধ্যার পর সেই রাস্তা দিয়ে যেতে চাই না।

এবার ধর্ষন থেকে বাঁচার জন্যও তো মেয়েদের কিছু ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নাকি এই আশায় বসে থাকবে যে ধর্ষক ভালো মানুষ হবে আর আমাদের ধর্ষন করবে না?! ধর্ষক তো ধর্ষক, খারাপ মানুষ। তার উপরে ভরসা না করে ব্যবস্থা নেওয়াই কি বুদ্ধিমানের কাজ নয়?! ধর্ষন থেকে বাঁচার সবথেকে বড় ব্যবস্থা হল হিযাব বা শরীর ঢাকা পোষাক, শরীরের গঠন বোঝা না যায় দেখতে সেক্সী না লাগে এমন পোষাক। তারপর কোন পুরুষের (বাবা, ভাই…) সাথে বাইরে যাওয়া, রাতে বেশি ধর্ষন হয় তাই রাতে অকারণে বাইরে না যাওয়া, নির্জন যায়গায় একা না যাওয়া, ধর্ষনের আইন মৃত্যুদন্ড করার জন্য আন্দোলন করা ইত্যাদি…ইত্যাদি। এরকম ব্যবস্থা না নিয়ে ধর্ষকরা ঠিক হও! ধর্ষকরা ঠিক হও! বলে সারা জীবন গলা ফাটালেও ধর্ষন কমবেনা। কখনই না, কোন ভাবেই না।

বিঃদ্রঃ আমি বলছিনা যে খারাপ পোষাক পড়ার কারণেই মেয়েরা ধর্ষিতা হয়। ধর্ষকের কোন অধিকার নাই কোন মেয়েকে ধর্ষন করার যদিও সেই মেয়ে অর্ধ নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াই।

PK এবং OMG

PK এবং OMG দেখার পর ধর্ম নিয়ে অনেকেরই সংশয় বেড়ে গেছে। এমনকি ধর্ম বিষয়ে অশিক্ষিত মুসলিমদেরও। ধর্ম খারাপ, ধর্ম কুসংস্কার, ধর্মের কোন দরকার নাই ইত্যাদি কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকেরই। তাই একজন মুসলিম হিসেবে ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে এই সংশয়বাদীদের কিছু বলতে চাই –

❖ ইসলাম ধর্ম মতে ইশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়। তিনি মানুষ, জীবজন্তু, পৃথিবী সহ সমগ্র গ্রহ-উপগ্রহ, সুর্য-তারা ও মহাকাশ সৃষ্টি করেছেন। তিনি কোন ব্যাপারেই কারও মুখাপেক্ষী নন। তিনি কারও মাধ্যমে জন্ম নেননি এবং কাউকে (শারীরিকভাবে) জন্ম দেননি। তার না আছে বাবা-মা না সন্তান-সন্ততি। তিনি সময়ের মতো.. অনন্তকাল থেকে আছেন এবং থাকবেন। কখনও তাঁর বিনাশ হবেনা। তাঁর তুলনা শুধুই তিনি।

❖ ইসলাম ধর্ম মতে আল্লাহর উপাসনা করার জন্য কোন মিডল ম্যানের প্রয়োজন পড়েনা। একটা বাচ্চা থেকে নিয়ে নারী বা বৃদ্ধ সকলে একা একাই তাঁর উপসনা করতে পারে। তিনি সকলের কথা শোনেন। আল্লাহর কাছে দো’আ করার জন্য বা কিছু চাওয়ার জন্য কোন জরিয়া বা মাধ্যমের দরকার পরেনা। কোন জ্ঞানী-গুণী লোকেরও দরকার পড়েনা। যেকেউ কোন মৌলভি, পীর বা দরবেশের সাহায্য ছাড়াই আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি জানাতে পারেন। দো’আ করতে পারেন। ক্ষমা চাইতে পারেন এবং তাঁর উপাসনাও করতে পারেন।

❖ ইসলাম ধর্মে আল্লাহর ইবাদত করার জন্য মসজিদ তৈরি করতে বলা হয়েছে এবং এখানে মুসলিমরা একত্রিতভাবে নামাজ আদায় করে। কিন্তু মসজিদ ছাড়া কোথাও নামাজ হবেনা এমন কোন ব্যাপার নাই। সারা দুনিয়াটাই মসজিদ। সব জায়গায় নামাজ পড়া যাবে এবং আল্লাহকে ডাকা যাবে। পৃথিবীর যেকোন কোনা থেকে আল্লাহকে ডাকলে আল্লাহ শুনতে পাবেন।

❖ উপাসনা বা ইবাদতে টাকা পয়সার কোন প্রয়োজন পড়েনা। ইসলাম ধর্মে গরীব বড়লোক সকলের ইবাদত একই। এখানে কোন টাকার খেলা নেই। কেউ মসজিদ মাদ্রাসায় দান করতে বাধ্যও নয়। বরং বলা হয়েছে শ্রেষ্ঠ সদকাহ হল যা পরিবারের পেছনে খরচ করা হয়। মসজিদ গেলে দান বাক্সে টাকা দিতেই হবে… ভক্তি বা ধর্মের নামে লাখ লাখ টাকা মানুষের কাছ থেকে তোলার কোন সিস্টেম নাই।

❖ ইসলাম ধর্ম মানুষকে নিজের ক্ষমতার বাইরে কিছু করতে বলেনা। ভক্তির নামে টাকা লুটাতে বা কষ্ট করে এটা ওটা করতেও বলেনা। ইসলাম অনেক সহজ সরল ধর্ম। উপকার পেতে ক্ষমতার বাইরে দান, বা নিজের শরীরের উপর জুলুম হয় এমন কোন রীতিনীতি নাই ইসলামে।

❖ ইসলাম ধর্মে অপচয় হয় এমন কোন নিয়মনীতি নাই। আল্লাহ বলেন অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। তাই মোমবাতি বা দুধ নষ্ট করে কিংবা চাদর চড়ানোর মতো কোন অপচয় নাই ইসলামে। বরং গরীবদের দান করতে প্রচুর নির্দেশ আছে। আর খাবার নষ্ট করার ব্যাপারেও আছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। বলা হয়েছে দান করতে, ফেতরা দিতে, যাকাত দিতে।

❖ অনেক মুসলিমদের মধ্যে অনেক কুসংস্কার দেখা দিলেও ইসলাম কখনওই কুসংস্কারযুক্ত ধর্ম নয়। ইসলাম কুসংস্কারমুক্ত ধর্ম। এই ধর্মে কোন রকমেরই অন্ধবিশ্বাস নাই। না আছে অযৌক্তিক প্রথা বা আইন। ইসলাম বিশ্বাসীদের পাশাপাশি অবিশ্বাসীদেরও চিন্তা করতে বলে।

❖ ইসলাম ধর্মে তাবিজ, কবজ, মাদুলি বা ধাগা পড়া নিষিদ্ধ। আল্লাহ ছাড়া কোন মানুষ বা বস্তুর উপর ভরসা করা বা সে বিপদ দূর করতে পারে বা উপকার করতে পারে এমন বিশ্বাস করা শিরক। আর শিরক এমন গুনাহ যার কোন ক্ষমা নাই। আল্লাহ সকল ব্যাপারে মহা ক্ষমতাবান। আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কারও কিছু করার ক্ষমতা নাই।

আমার মাথায় এগুলোই আসলো। আরও কোন ব্যাপারে কারও সংশয় থাকলে বলতে পারেন। ইনশাআল্লাহ আমি চেষ্টা করবো জেনে আপনাদেরকে জানানোর। মহান আল্লাহর সেই কথাটি এখানে বলতেই হয়, ‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য একমাত্র জীবন ব্যবস্থা হল ইসলাম’।

হ্যোমিওপ্যাথিতে অনেক আজগুবি আজগুবি রোগের ঔষধ আছে। ব্যবহার পরিবর্তনেরও আছে। বিয়ের আগে আমাকে খুব ভয় লাগত বউকে নিয়ে ডাক্তারের বাড়ি যাওয়ার কথা ভেবে। এটা আমার কাছে চরম বিরক্তিকর একটা ব্যাপার ছিল। তাই এক হ্যোমিওপ্যাথি ডাক্তার বন্ধুর কাছে এই সমস্যার জন্য ওষুধও চেয়েছিলাম 😜 উনি বলেছিলেন, সময়ের সাথে, অবস্থার সাথে সবকিছু এডজাস্ট হয়ে যায়। পরে বুঝলাম, বিয়ে তো আল্লাহর এক বিশেষ নি’আমাত। আর স্বামী স্ত্রী হল একে অপরের পোষাকের মতো। স্বামী স্ত্রীর প্রেমের সাথে কোন কিছুরই তুলনা হয়না। এ এক আশ্চর্যকর সৃষ্টি। তাই যেটাকে বিয়ের আগে ভয় পেতাম, সেটাকেই এখন রোম্যান্টিক মনে হয়। যেটার কথা ভেবে ঘাবরে যেতাম সেটাকেই এখন এঞ্জয় করছি। আলহামদুলিল্লাহ!